রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল (ছবি-২০১১)
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র বোয়ালিয়া মৌজার সাহেব বাজারের পূর্বপাশ সংলগ্ন জায়গায় অবস্থিত। ক্যাম্পাসের পরিমাণ ০.৯৭ একর। এর কিছু অংশ সড়কের মধ্যে চলে গেছে। বর্তমানে তৃতীয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেদের জন্য একাডেমিক ব্যবস্থা চালু আছে। দেশের সর্ব প্রাচীন আধুনিক কারিকুলামের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকাল ও বিভিন্ন সময়ে নামের পরিবর্তন নিয়ে তথ্যের বিভিন্নতা বিদ্যমান। স্কুলের সূচনা ও পরবর্তী সময়ের কোনো তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ না থাকায় এ সব বিভিন্নতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। মৌলিক সূত্রের অভাব ও কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত ক্যালেন্ডারসমূহে বিচিত্র তথ্য উপস্থাপনকেও তথ্য বিভিন্নতার জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
সত্য অনুসন্ধানের প্রচেষ্টায় কিছু গ্রন্থ ও প্রবন্ধে উপস্থাপিত তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করা যায়। ঐতিহ্য ২০১৩ শিরোনামে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল বার্ষিকীর তৃতীয় পৃষ্ঠায় (টাইটেল পেজের পরবর্তী পাতা) একটি কাল্পনিক ছবি এঁকে শিরোনামে লেখা হয়েছে পদ্মা নদীর তীরে ১৮২৮ সালে খড়ের চালা নির্মিত সর্ব প্রথম স্কুলঘর, পরবর্তী সময়ে স্কুল ঘরটি নদীর স্রোতে ভেঙ্গে যায়। ছবিটি সাদাকালোতে ২৫ পৃষ্ঠায় প্রধান শিক্ষক ড. নূরজাহান বেগমের ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল’ শিরোনামের প্রবন্ধেও সন্নিবেশ করা হয়েছে। নূরজাহান তাঁর প্রবন্ধে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৮২৮ ও প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘বুয়ালিয়া ইংলিশ স্কুল’ ও ১৮৭৭ সালে ‘রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল’ নামকরণের কথা বলেছেন।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের বিলুপ্ত ভবন
১৮৩৫ সালের জুলাই মাসে স্কুলটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছিলেন তৎকালীন ভারতের শিক্ষা কমিশনার উইলিয়াম অ্যাডাম। তাঁর তদন্ত রিপোর্ট ও সুপারিশের ভিত্তিতে স্কুলটি সরকারি ব্যবস্থপনায় চলে যায় ১৮৩৬ সালে। অ্যাডাম তাঁর প্রতিবেদনে স্কুলটির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৩৩ উল্লেখ করেন এবং প্রতিবেদন শিরোনাম লিখেন ‘ইংলিশ স্কুল’।৬৬৪
ড.ড ঐঁহঃবৎ, ইঅ এ স্কুলকে দি রামপুর বুয়ালিয়া স্কুল (ঞযব জধসঢ়ঁৎ ইবধঁষবধয ঝপযড়ড়ষ) নামে উল্লেখ করে বাংলার সরকারি জেলা স্কুলসমূহের র্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ বলেছেন। তবে স্থাপন কাল সম্পর্কে আলোচনা করেননি।১১৫ শ্রীকালীনাথ চৌধুরী অ্যাডামসের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৩৬ সালের ২০ জুন উল্লেখ করে স্কুলের নাম বলেছেন জেলা স্কুল।১১৪ ও’ ম্যালী একটি ইংলিশ স্কুল উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠাকাল ১৮২৮ বলেছেন।৬১২ কাজী মোহাম্মদ মিছের ১৮২৮ সালে বুয়ালিয়া ইংলিশ স্কুল স্থাপনের কথা বলেছেন এবং ১৮৩৬ সালে সরকারি হবার পর জেলা স্কুল নামকরণের উল্লেখ করেন।১
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকারী মুদ্রণালয় তেজগাঁ ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ জেলা গেজেটীয়ার বৃহত্তর রাজশাহী গ্রন্থের ৩০৫ পৃষ্ঠায় স্কুলের নাম রাজশাহী কলেজিয়েট হাই স্কুল ও প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৩৬ উল্লেখ করা হয়েছে। আবার ৩১১ পৃষ্ঠায় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল শিরোনামে এর প্রতিষ্ঠাকাল ১৮২৮ ও প্রতিষ্ঠাকালীন নাম বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল বলা হয়েছে।২ রাজশাহী কলেজ বর্তমান নিজস্ব প্রকাশনাগুলোই প্রতিষ্ঠাকালীন নাম বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ১৮২৮ উল্লেখ করছে এবং ১৮৩৬ সালে পরিবর্তিত নামে লিখছে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল।৬৫৫
শতবর্ষ স্মরণিকা ১৯৮৮ শিরোনামে রাজশাহী কলেজের প্রকাশনাটিতে বেশ কয়েকটি তথ্যবহুল প্রবন্ধ স্থান পায়। যেগুলোর মধ্য এস এম আব্দুল লতিফ রচিত ‘উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের রাজশাহী কলেজ: প্রসঙ্গ কথা’, ফজলুল হক রচিত ‘রাজশাহী কলেজ: কিছু জ্ঞাতব্য তথ্য’, মো. গোলাম কিবরিয়ার ‘রাজশাহী কলেজ ও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা’, মো. মুজিবুর রহমানের ‘শতাব্দীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস রাজশাহী কলেজ’ প্রবন্ধ চারটিতে রাজশাহী কলেজের ঐতিহাসিক বিবরণ লিপি হয়েছে।৬৫৬ এস এম আব্দুল লতিফ ১৮৭৩ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহী জেলা স্কুলে এ কলেজের যাত্রা বলেছেন।৬৫৭ অধ্যাপক ফজলুল হক অনেকটা নির্ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রাচীন ইতিহাসে না গিয়ে ১৮৭৩ সালে স্কুলটির পরিবর্তিত নাম বুয়ালিয়া হাই স্কুল এবং ১৮৭৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে উন্নীত হবার পর বাউলিয়া হাই স্কুল এর পরিবর্তে রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী কলেজিয়েট হাই স্কুল নামকরণের কথা বলেছেন।৬৫৮ মো. গোলাম কিবরিয়া রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের প্রাথমিক পরিচয় একটি প্রাইভেট ইংলিশ স্কুল উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠাকাল ১৮২৮ সাল এবং ১৮৩৬ সালে সরকারীকরণের পর জিলা স্কুল নামকরণের কথা বলেছেন।৬৫৯ মো. মুজিবুর রহমান রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের প্রাথমিক নাম ও প্রতিষ্ঠাকাল বুয়ালিয়া ইংলিশ স্কুল ও ১৮২৮ উল্লেখ করেছেন। আবার ১৮৭৩ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহী কলেজের যাত্রাকাল এবং এর প্রথম অধ্যক্ষ কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ হরগোবিন্দ সেন উল্লেখ করেন।৬৬০ রাজশাহী এসোসিয়েশন সাহিত্য পত্রিকার ১ম সংখ্যায় (জুলাই ১৯৮৭) মো. নূরুন্নবী ‘আধুনিক শিক্ষা সম্প্রসারণে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ভূমিকা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধে বিভিন্ন মৌলিক সূত্র ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন। তাঁর প্রবন্ধে উঠে এসেছে এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাকাল ১৮২৮ সাল ও প্রাথমিক নাম বোয়ালিয়া স্কুল। ১৮৭৩ সালের পর বোয়ালিয়া স্কুল এর নামকরণ কলেজিয়েট স্কুল হয় মর্মে তিনি প্রবন্ধে তথ্য এনেছেন।৬৬১ ১৮৭৮ সালে কলকাতা ইউনিভার্সিটি কর্তৃক রাজশাহী কলেজের অ্যাফেলিয়েশন ‘অ্যালম্যানাক ১৮৭৯-৮০’ এর ১৪৬ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। সেখানে এটাকে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে প্রকৃত প্রতিষ্ঠাকাল জেলা স্কুল হিসেবে ১৮৩৬ সাল উল্লেখ করা হয়েছে।৬৬২ আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৩১ সালের ক্যালেন্ডারে রাজশাহী কলেজ স্থাপনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে উল্লেখ আছে, অরিজিন্যালি রাজশাহী কলেজ ১৮২৮ সালে স্থাপিত হয়েছিল একটি প্রাইভেট ইংলিশ স্কুল হিসেবে।৬৬৩
২০০৬ সালের মে মাসে প্রকাশিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফাইলে (UNIVERSITY OF RAJSHAHI, A PROFILE) রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলকে ১৮৩৬ সালে ‘রাজশাহী জেলা স্কুল’ নামে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। প্রোফাইলের অংশ বিশেষে লেখা হয়েছে, `Rajshahi Zilla School (1836), Rajshahi College (1873), Rajshahi Public Library (1884) and the Varendra Research Society and Museum were leading institutions to contribute to such a prestigious status.’ দেশের সর্ব প্রাচীন আধুনিক শিক্ষার উৎস প্রতিষ্ঠানটির এ রকম বিচিত্র তথ্য সম্ভার থেকে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে মৌলিক সুত্র আবিস্কারের জন্য প্রায় মাসব্যাপী অভিযান চালানো হয়। অভিযান সহযোগীদের মধ্যে ছিলেন গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, রাজশাহী কলেজের গ্রন্থাগারিক মো. মহিউদ্দিন ও অফিস সহায়ক সোহেল প্রমুখ। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এ স্কুল সম্পর্কিত কলকাতা ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন সালের ক্যালেন্ডারের অংশ:
Calcutta University Almanac: 1879-80
Rajshahye College
Affiliated, 1878
The college is under the control of the Director of Lower Bengal. It is a Government Institution, originally established as a Zilla School in 1836. In 1873 it was a raised to a Second Grade College (High School), and in1878, to a First Grade College, the additional expenditure on this account being met partly by a state contribution and a partly by local subscriptions and the proceeds of an estate granted in perpetuity to government by Hara Nath Roy Bahadur of Dubalhati. Instruction is given up to the standard of the B.A. Examination of the Calcutta University. The students of the college classes pay a monthly fee of Rs.
Instructive Staff
Principal F.T. Dowding, B.A.
Professor Babu Haragobinda Sen
Assistant Professor of Mathematics Bipinbihari Gupta, M.A.
Lecturer on Botany and Chemistry Harilal Mukharjee, M.A.
Assistant Professor of Sanskrit Baikanthnath Tattabhushan.
Head Master of Collegiate School Kalikumar Das, B.A.
2nd Master, ditt Sagarchandra, B.A.
And Seven other assistant Masters, two pandits and a Persian teacher.662
১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত The Calendar 1931 ১৯৩১এ রাজশাহী কলেজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
Rajshahi College
(P.O. Rajshahi, District Rajshahi)
FIRST AFFILIATION, 1878
Short History of its Foundation.
Rajshahi College Was originally a private English School founded in 1828 and subsequently taken over by Government and turned into a Zilla School in 1836. In 1872 Raja Hara Nath Ray of Dubalhati made a gift of a Zamindari Estate yielding an annual income of Rs. 5,ooo and Government at once raised the School to the status of a second grade College in 1873. A further gift came from Maharani Sarat Sundari Devi, who bore the full cost of erecting a pucca bulding for the College .In 1875 it was proposed to turn it into a first grade College and with the timely gift of Rs.1,50,000 made by Raja Pramatha Nath Roy of Dighapatia through the Rajshahi Association it became possible for Government to carry out the proposal and raise the institution into a first grade College in 1878 when B.A. classes were opened for the first time with Mr. F.J. Dowding (Mr. F.T. Dowding) as Principal. The Rajshahi Association was able to raise a further subscription of Rs. 60,703 with which a new bulding was erected, wherein the College classes were shifted. In 1881 B.L. classes were added and in 1893 M.A.classes too. These classes continued for 16 years, when in 1909 owing to the new Regulations of the Calcutta University the B.L. and M.A. affiliation was withdrawn. The College now teaches up to the B.A.and B.Sc. Honours standards. In 1924 it had 1,000 students on the rolls and a separate two-storeyed block of six rooms has been recently built at a cost of Rs. 87,000. The tuition fee in the General Department is Rs. 6 only in I.A. and B.A. and Rs.7 in I.Sc. and Rs. 8 in the B.Sc. classes.663
Calcutta University Calendar, 1859 এ প্রকাশিত তৎকালীন নাম বোয়ালিয়া স্কুলের প্রবেশিকা (বর্তমান এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফল৬৬৫
Under-Graduates
Who have passed the Entrance Examination
First Divission: No
Second Divission:
Mohiney Mohan Chuckerbutty 1859, Bauleah School. Page no.95
Oomkant Moytro 1859, Bauleah School. Page no.96
Ram Gopal tallapatra 1859, Bauleah School. Page no.97
Calcutta University Calendar, 1868-69 এ প্রকাশিত তৎকালীন নাম বোয়ালিয়া স্কুলের প্রবেশিকা (বর্তমান এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফল৬৬৬
Entrance Examination, 1866
First Divission:
Lahuri, Priyanath………………Bauleah School. Page no.208
Second Divission:
Mukhopadhyay, Satyatara ……Bauleah School. Page no.215
Third Divission:
Maitra, Haricharan …………Bauleah School. Page no.221
Entrance Examination, 1867
First Divission:
Sanial, Sasimohan………………Bauleah School. Page no.226
Second Divission:
Bagchi, Annadaprasad…………Bauleah School. Page no.227
Majumdar, Govindanath……… Bauleah School. Page no.232
Mitra, Kedareshwar……………Bauleah School. Page no.233
Mitra, Umeschandra……………Bauleah School. Page no.233
Mukhopadhyay, Asutosh………Bauleah School. Page no.233
Sen, Maheschandra…………… Bauleah School. Page no.235
Third Divission:
Bagchi, Lolitmohan……………Bauleah School. Page no.237
Ray, Gaurlal……………………Bauleah School. Page no.244
Calcutta University Almanac, 1879-80 এ প্রকাশিত তৎকালীন নাম বোয়ালিয়া হাই স্কুলের প্রবেশিকা (Entrance বর্তমান এসএসসি) ও
এফএ (First Arts=FA বর্তমান এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফল৬৬২
Under-Graduate
First Examination in Arts
First Divission: No
Second Divission:
Chakrabarti, Durgakanta Baulia High School. Page no. 238
Sarkar, Gopalchandra Baulia High College. Page no. 239 (Calcutta University Almanac, 1879-80 এর ২৩৯ পৃষ্ঠায় এখানে High College শব্দ দুটিতে কলমের কাটা দাগ আছে। প্রিন্টিংয়ে ভুলের কারণে হয়তো Baulia High School এর পরিবর্তে Baulia High College এসেছে। এ কারণে পুরোপুরি সংশোধন না করে High College শব্দ দুটি কলমে কেটে রাখা হয়েছে)
Third Divission:
Ghosh, Prassannakumar Baulia High School. Page no. 241
Misra, Ramgobinda Baulia High School. Page no. 241
Munsi, Gurunath Baulia High School. Page no. 241
Under-Graduate
First Examination in Arts
1878
First Divission:
Lahiri, Lalitmohan Bauleah High School. Page no. 243
Second Divission:
Chakrabarti, Kunjabihari Bauleah High School. Page no.244
Third Divission:
Ray, Isanchandra Bauleah High School. Page no.248
Entrance Examination
1877
First Divission:
Das, Radhagobinda Baulia High School. Page no.249
Mitra, Srischandra Baulia High School. Page no.251
Second Divission:
Caudhuri, Umeschandra Baulia High School. Page no.255
Poddar, Prasnnakumar Baulia High School. Page no.261
Third Divission:
Biswas, Durgacharan Baulia High School. Page no.265
Maitra, Saradamohan Baulia High School. Page no.268
Maitra, Taraknath Baulia High School. Page no.269
Saynal, Pulinchandra Baulia High School. Page no.271
Entrance Examination
1878
First Divission:
Chaudhuri, Kisorimohan Bauleah High School. Page no.273
Lahiri, Mohinimohan Bauleah High School. Page no.274
Maitra, Akshaykumar Bauleah High School. Page no.274
Sinha, Debendranath Bauleah High School. Page no.275
Second Divission:
Acharyya, Nilkanta Bauleah High School. Page no.276
Chaudhuri, Bhabendranarayan Bauleah High School. Page no.279
Mukhopadhyay, Sasibhushan Bauleah High School. Page no.285
Sayal, Durgananda Bauleah High School. Page no.287
Sarkar, Kailaschandra Bauleah High School. Page no.287
Third Divission:
Goswami, Harischandra Bauleah High School. Page no.292
Gupta, Baragobinda Bauleah High School. Page no.292
Maitra, Kedarnath Bauleah High School. Page no.292
সূত্রগুলোই তথ্যের বিভিন্নতা স্পষ্ট। এ সব প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত স্থাপন কাল নির্ধারণের সিদ্ধান্তে আসা যায় না। তাই এ বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন। তবুও আরো কিছু গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে প্রচেষ্টা চালোনো হলো।
স্থাপন কাল: সরকারিকরণের সময় ধরে অনেকে স্কুলটির স্থাপনকাল ১৮৩৬ চিহ্নিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে স্কুলটি বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তারও পূর্বে। উইলিয়াম অ্যাডামই স্কুলটি পরিদর্শন করেন ১৮৩৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তাঁর পরিদর্শন বিবরণের ভিত্তিতেই স্কুলটির প্রতি সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আসে ও সরকারি হয়। তিনি বিবরণের শুরুর দিকে লিখেছেন, The school was established in July, 1833.অর্থাৎ স্কুলটি স্থাপন হয়েছিল ১৮৩৩ সালের জুলাইয়ে। বর্তমান প্রবন্ধকারের অনেকে উইলিয়াম অ্যাডামের রিপোর্টের অংশ বিশেষ তাঁদের প্রবন্ধে আনলেও তাঁর প্রতিবেদনে উল্লিখিত স্থাপনের সময়টি এড়িয়ে গেছেন। স্কুলের তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি উন্নত ও সমৃদ্ধ না হওয়ার কারণে মৌলিক সূত্র আবিস্কার সম্ভব হচ্ছে না। কিছু আছে রাজশাহী কলেজের লাইব্রেরিতে। সেখানে পুরনো অংশ ক্যাটালগ পদ্ধতির বিন্যাস নেই। উইলিয়াম অ্যাডামের এ রিপোর্টটি সেখান থেকেই পাওয়া গেছে অনাথনাথ বসু সম্পাদিত Introduction to Adam is Report-1941 গ্রন্থে। গ্রন্থটি ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ১৮৩৬ থেকে ১৯৪১ সালের ব্যবধান ১০৫ বছর। শতাব্দী পর সম্পাদিত গ্রন্থটিতে দু’ এক জায়গার প্রিন্টিং ভুলও হতে পারে। আবার উপস্থাপন তথ্যেও ভ্রান্তি থাকতে পারে। যেমন-কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৭৯-১৮৮০ এর অ্যালমানাক বলছে, It is a Government Institution, originally established as a Zilla School in 1836. আবার ১৯৩১ সালের ক্যালেন্ডার উল্লেখ করছে,, Rajshahi College was originally a private English School founded in 1828 and subsequently taken over by Government and turned into a Zilla School in 1836. দেশের সর্বপ্রাচীন আধুনিক একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঐতিহ্য স্বীকৃতির দাবিদার। গবেষণার ভিত্তিতে জ্ঞান বিকাশেও অবদান রাখতে পারে এ স্কুলটি। যথাযথ মৌলিক গবেষণা হলে উল্লিখিত বিভ্রান্তির সমাধান আসতে পারে। আপাতত ধরে নেয়া যায়, অনুসন্ধানের গভীরে গিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৭৯-১৮৮০ এর অ্যালমানাকের তথ্য সংশোধন করে ১৯৩১ সালের ক্যালেন্ডারে বলা হয়েছে প্রাইভেট ইংলিশ হিসেবে ১৮২৮ সালে যাত্রা শুরু করেছিল বর্তমান রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল।
স্কুলের নাম: বিভিন্ন প্রবন্ধ ও গ্রন্থে যাই লিখা হোক না কেন আদিতে এ স্কুলের নাম বোয়লিয়া ইংলিশ স্কুল বা কলেজিয়েট স্কুল ছিল না। জেলা স্কুল নামকরণ কখনও হয়নি। উইলিয়াম অ্যাডামের রিপোর্টের শিরোনাম ছিল English School.. রিপোর্টের অংশ বিশেষে উল্লেখ করা হয়েছে English School at Bauleah. যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ইংলিশ স্কুল বোয়লিয়ায় অবস্থিত। Selections from Educational Records Part-1(1781-1839) গ্রন্থের ১৭৩ পৃষ্ঠায় এ স্কুলের নাম লিখা হয়েছে Bauleah School. J.R.Colvin এর নোট থেকে প্রকাশিত এ গ্রন্থের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ১৮৩৭ সালে এর ছাত্র সংখ্যা ছিল ৮০ জন ও গড় মাসিক ব্যয় হয়েছিল ১৭৭ রুপি।৬৬৭ স্বতন্ত্র রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ের ক্যালেন্ডারগুলোই প্রকাশিত এন্ট্রান্স ও এফএ পরীক্ষার ফলাফলেও স্কুলের নাম বোয়ালিয়া স্কুল এবং বোয়ালিয়া হাই স্কুল লিখা হয়েছে। যেমন- ১৮৫৯ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ১৮৫৯ সালের এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফলাফল এবং ১৮৬৮-৬৯ সালের ক্যালেন্ডারে ১৮৬৬ ও ১৮৬৭ সালের এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফলাফলে স্কুলের নাম আছে Bauleah School. রাজশাহী কলেজের লাইব্রেরিতে প্রাপ্ত ১৮৫৯ সালের কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারের একটি কপিতে দুটি সিলের ছাপ পাওয়া যায়। ছাপ দুটির একটি নীল কালির। তাতে লিখা আছে Rajshahi College. অপরটি কালো কালির। যাতে লিখা আছে BAULEAH SCHOOl. সিলটি এ গ্রন্থের ১৬, ১৭, ১০০, ১৯১ পৃষ্ঠায় আছে। রং দেখেই জানা গেছে BAULEAH SCHOOL সিলটি আগের এবং Rajshahi College সিলটি পরের। নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো:
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার- ১৮৫৯ এর পাতা
১৮৭৯-৮০ সালের ক্যালেন্ডারে স্কুলের নাম ও বোয়ালিয়া শব্দটির ইংরেজি বানানে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এ ক্যালেন্ডারে ১৮৭৭ সালের এন্ট্রান্স ও এফএ পরীক্ষার ফলাফলে স্কুলের নাম আছে Baulia High School. আবার একই ক্যালেন্ডারে ১৮৭৮ সালের এন্ট্রান্স ও এফএ পরীক্ষার ফলাফলেও স্কুলের নাম আছে Bauleah High School. এ বছরেই রাজশাহী কলেজ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশন (স্বীকৃতি) পায়। ইংরেজি অক্ষরে যার বানান ছিল Rajshahye College. এ সময় বোয়ালিয়া হাই স্কুল পরিবর্তিত নাম কলেজিয়েট স্কুল। অর্থাৎ বোয়ালিয়া হাই স্কুল দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি অংশের নাম হয় রাজশাহী কলেজ (Rajshahye College) এবং আর একটি অংশ কলেজিয়েট স্কুল (ঈড়ষষবমরধঃব ঝপযড়ড়ষ)।৬৬২ তবে একই ম্যানেজমেন্টে প্রতিষ্ঠান দুটি পারচালিত হতো। পরবর্তীতে কোনো এক সময় স্কুলের নামের পূর্বে রাজশাহী শব্দটি যোগ হয়ে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল নাম ধারণ করে।
কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৭৯-১৮৮০ এর অ্যালমানাক, কালীনাথ চৌধুরী তাঁর রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস গ্রন্থসহ কোনো কোনো গ্রন্থ ও প্রবন্ধে ১৮৩৬ সালে স্কুলটিকে জেলা স্কুল বা জিলা স্কুল (Zilla School) নামে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। আসলে স্কুলটি কখনও জেলা স্কুল বা জিলা স্কুল নাম পায়নি। হয়তো তখন জেলা স্কুলের মর্যাদা দিয়ে স্কুলটিকে সরকারি করা হয়েছিল। তবে ১৮৩৬ সালে ইংলিশ স্কুলের পরিবর্তে নাম দেয়া হয় বুয়ালিয়া স্কুল।Bauleah, Baulia উভয় বানানেই ইংরেজি অক্ষর ইউ (u) ব্যবহার হয়েছে। গবেষকগণ রাজশাহী শহরের পূর্বের নাম ফার্সি শব্দটিকে বাংলা অক্ষরে কেউ ‘বুয়ালিয়া’ কেউ ‘বোয়ালিয়া’ কেউ ‘বাউলিয়া’ ব্যবহার করেছেন। বর্তমানের ব্যবহার বোয়ালিয়া। ফার্সি বুয়ালিয়া/বোয়ালিয়া শব্দটি ইংরেজরা উচ্চারণের সুবিধার্থে কখনও Bauleah, কখনও Baulia ব্যবহার করেছে। সুতরাং সে সময়ে শহরের নাম ছিল বুয়ালিয়া/বোয়ালিয়া।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে আসা যায়, ১৮২৮ সালে বর্তমান রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ইংলিশ স্কুল (English School) সই সময়ের স্থানের নাম সংযোজনে এনে প্রবন্ধকারেরা ইংরেজদের উচ্চারণে বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল (Bauleah English School) বলছেন। ১৮৩৬ সালে সরকারিকরণের সময় নাম পায় বোয়ালিয়া স্কুল (Bauleah School)| ১৮৭৩ সালে এফএ ক্লাস যুক্ত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (Calcutta University) Bauleah School এর মাঝখানে হাই (High) শব্দের সংযোগ ঘটিয়ে স্কুলটির নাম দেয় বোয়ালিয়া হাই স্কুল (Bauleah High School) এবং সেকেন্ড গ্রেড কলেজের মর্যাদা দান করে। ১৮৭৮ সালে রাজশাহী কলেজ (Rajshahye College) এর অ্যাফিলিয়েশন (স্বীকৃতি) দেয়ার সময় মাধ্যমিক অংশের নাম রাখে কলেজিয়েট স্কুল (Collegiate School)| স্থানের নামানুসারে কোনো এক সময় কলেজিয়েট স্কুল শব্দ দুটির পূর্বে রাজশাহী শব্দটি যোগ হয়েছে। ফলে দেশের সর্ব প্রাচীন এ আধুনিক প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল (Rajshahi Collegiate School) নামে প্রসিদ্ধ।লেখকের বিবরণ: উইলিয়াম অ্যাডাম ১৮৩৫ সালের মাঝ পর্যায়ে এ স্কুল পরিদর্শন করেন বলে তাঁর বিবরণীতে উল্লেখ করেন। তিনি স্কুলের নাম ও অবস্থান সম্পর্কে লিখেছেন English School at Bauleah. সে সময় বোয়ালিয়া বলতে বোঝাত বড়কুঠি ও তার আশেপাশের এলাকা। স্কুলটির সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে উইলিয়াম অ্যাডাম তথ্য দেননি। তবে ১৮৫৮-১৮৫৯ সালের রিপোর্ট অনুসারে স্কুলটি পদ্মার ভাঙ্গনের মুখে পড়লে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সিই চ্যাপম্যানের নেতৃত্বে স্কুলের মালপত্র গুটিয়ে আনা হয়।৬৬১ প্রবন্ধকার মো. নুরুন্নবী ২০১৬ সালের ৬ মার্চ রাজশাহী কলেজের লাইব্রেরিয়ান মো.মহিউদ্দিনের চেম্বারে মত প্রকাশ করেন, মালপত্র গুটিয়ে এনে রাখা হয়েছিল কোনো সরকারি অফিসের বাংলোই। আবার ২০১৬ সালের ২০ মার্চ নগর ভবনের ২১১ নং রাজশাহী সিটি মিউজিয়াম কক্ষে তিনি মত প্রকাশ করেন, মালপত্র গুটিয়ে আনা হয়েছিল সার্কিট হাউসে। মো. নুরুন্নবী তাঁর প্রবন্ধে ১৮৪১ সালের ডিপিআই রিপোর্টসহ বেশ কিছু রেফারেন্স দিয়েছেন। সে সব তথ্য রিপোর্ট ও গ্রন্থে তিনি পড়েছিলেন। রিপোর্ট ও গ্রন্থগুলো রাজশাহী কলেজ লাইব্রেরির পুরনো অংশে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন। তাঁর পরামর্শ অনুসারে রাজশাহী কলেজ লাইব্রেরির পুরনো অংশের সেল্ফগুলো অনুসন্ধান করেও সেগুলো উদ্ধার সম্ভব হয়নি। আরো অনুসন্ধান প্রয়োজন।
এ সব তথ্য থেকে বলা যায়, ইংলিশ স্কুল সর্ব প্রথম বড়কুঠির পাশের কোনো এক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল। অ্যাডামের বিবরণ অনুসারে তাঁর পরিদর্শন কালে অর্থাৎ ১৮৩৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্কুলটি চালু ছিল। তবে আর্থিক সংকটের কারণে ১৮৩৪ সালের নভেম্বরে শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধকালীন ছাত্রসংখ্যা ছিল ১৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ নিয়মিত ছিল। ইংরেজি ও বাংলা উভয় মিডিয়ামে পড়ানো হতো। ১৩৪ জন ছাত্রের মধ্যে ৮৫ জন ইংরেজি ও ৪৯ জন বাংলা মিডিয়ামে পড়তো। বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রদের বয়স ছিল পাঁচ থেকে চৌদ্দ বছর ও ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রদের বয়স ছিল আট থেকে চব্বিশ বছর। বাংলার ছাত্ররা ছিল বোয়ালিয়া শহর ও তার আশেপাশের এলাকার। ইংরেজির বৃহৎ অংশ বোয়ালিয়া বাসিন্দা ছিল না। কেউ কেউ ছিল কোর্টে চাকরিজীবীদের সন্তান। কেউ কেউ ছিল পাবনা, কুমারখালি, নাটোর ও মুর্শিদাবাদ থেকে আগত। বাংলা মিডিয়ামের ছাত্ররা দেশীয় পদ্ধতিতে লিখা, পড়া ও হিসাব শিখত। প্রথম দিকে তাঁদের পড়া-লিখার উপকরণ স্কুল থেকেই সরবরাহ করা হতো। পরবর্তীতে তাঁদের নিজ খরচে হতো। ফলে ২৫ জন ছাত্র স্কুল ত্যাগ করে।
ইরেজির ছাত্ররা প্রথমে পড়া ও বানান শিখতো। পরবর্তীতে লিখা এবং ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ পড়তো। মৌখিকভাবে তাঁদের কিছু ভূগোল ও জ্যোতির্বিদ্যা শেখানো হতো। সর্বোচ্চ শ্রেণির পাঠ্যসূচি ছিল ইংরেজি ইতিহাস ও প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক দর্শনের সাথে পরিচিতি।
বাংলা ও ইংরেজি ছাত্রদের পাঠ পরিকল্পনা পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যায়, ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হতো। তাঁদের পাঠ্য ছিল বেশ মানসম্মত। ইংরেজির শিক্ষকদের বেতনও ছিল বেশি। অন্যান্য সুবিধাও পেত। উইলিয়াম অ্যাডামের বিবরণীতে তিন জন শিক্ষকের তথ্য পাওয়া যায়। একজন ইংরেজি, একজন তাঁর সহকারী ও একজন বাংলা। ইরেজি শিক্ষকের মাসিক বেতন ছিল ৮০ রুপি, সহকারী ইরেজি শিক্ষকের মাসিক বেতন ছিল ২০ রুপি ও বাংলা শিক্ষকের মাসিক বেতন ছিল মাত্র ৮ রুপি। ইংরেজি শিক্ষকের জন্য ৮০০ রুপি ব্যয়ে একটি বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। তিনি বিনা ভাড়ায় আবাসিক সুবিধা পেতেন। স্কুল ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ১২০০ রুপি। বই, কাগজ, কলম, কালি ও স্কুলটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১২ রুপি। স্কুল ও শিক্ষকের বাসভবন নির্মিত হয়েছিল চাঁদা তুলে। স্কুল পরিচালন ব্যয় নির্বাহ হতো একই পদ্ধতিতে। চাঁদাদাতা ছিলেন সরকারি আমলা, নীল ব্যবসায়ী, জমিদার ও আদালতের স্থানীয় কর্মকর্তা। ব্যয়ের চেয়ে চাঁদার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে স্কুলটি এক সময় সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।৬৬৪- পৃ.১৮৫
উইলিয়াম অ্যাডামের পরিদর্শনের পর স্কুলটি ১৮৩৬ সালে সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।৬৬৩ বোয়ালিয়া স্কুল (Bauleah School) নামে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়েছিল। ১৮৩৭ সালের শেষ পর্যায়ে এর ছাত্র সংখ্যা ছিল ৮০ জন এবং প্রতি মাসের গড় খরচ ছিল ১৭৭ রুপি।৬৬৭ ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পর বোয়ালিয়া স্কুল তার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ১৮৭৩ সালে এফএ শ্রেণি সংযুক্ত করে স্কুলটিকে সেকেন্ড গ্রেড কলেজের মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং নামকরণ হয় বোয়ালিয়া হাই স্কুল। ১৮৭৮ সালে বোয়ালিয়া হাই স্কুলকে দুটি অংশে ভাগ করে একাংশকে ফার্স্ট গ্রেডের মর্যাদা দিয়ে রাজশাহী কলেজ নামে অ্যাফিলিয়েশন দেয়া হয়। অপর অংশ কলেজিয়েট স্কুল নাম দিয়ে বোয়ালিয়া হাই শব্দ দুটির বিলুপ্তি ঘটে। কোনো এক সময় স্থানের নাম রাজশাহী শব্দটি যোগ হয়ে আজকের রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল নামটি পরিচিতি পায়। মো. নূরুন্নবী তাঁর প্রবন্ধে তথ্য প্রদান করেছেন, ১৮৩৬ সালে সরকারিকরণের পর সারদা প্রসাদ বসুকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। সরকার বন্ধকের টাকা মিটিয়ে দিয়ে স্কুলটিকে দায় মুক্ত করে। স্কুলটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় জনশিক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যার ইংরেজি নাম ছিল Local Committee of Public Instruction.661 সরকারি খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার ১৮৪৫ সালে এ স্কুলের ছাত্র বেতন চালু করে। ফলে আর্থিক উন্নয়নের সঙ্গে লেখাপড়ার মানোন্নয়ন ঘটে।৬৬১
১৮৪৮ সালে ইন্সপেক্টরের প্রস্তাব অনুসারে স্থানীয় জনশিক্ষা কমিটির সেক্রেটারী ৭৬৭১-৬-১ অংকের একটি হিসাব দু’শ জন ছাত্রের একটি ভবন নির্মাণের জন্য বাংলা সরকারের নিকট নকশা পেশ করেন। ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে স্থানীয়ভাবে চাঁদা তোলা হয়। ৩১৬৪-৯ অংকের টাকা স্থানীয় কালেকটর অফিসে জমা ছিল। ১৮৪৮ সালে ফান্ডে মোট জমা হয় সর্বমোট ৫৯৮২-৯-২ টাকা। এ অর্থের সিংহভাগ প্রদান করেন দিঘাপতিয়ার জমিদার রাজা প্রসন্ননাথ রায় ও নাটোরের জমিদার আনন্দনাথ রায়। ১৮৪৯ সালে বোয়ালিয়া স্কুলের পাকা ভবন নির্মিত হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে ভবনটি পদ্মায় ভেঙ্গে যায়।৬৬১ এরপর বর্তমান স্থানে পুনরায় পাকা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং ১৮৬২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এ ভবন নির্মাণে সরকার ও জমিদারদের অনুদান এবং ছাত্রদের উদ্বৃত্ত অর্থও ব্যয় হয়েছিল।৬৬১ ভবন নির্মাণে পুঠিয়ার জমিদার যোগেন্দ্র নারায়ণ অর্থ সাহায্য প্রদান করেছিলেন। যা ১৯৯২ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।৯২ স্কুলে এফএ ক্লাস খোলার জন্য দুবলহাটির জমিদার হরনাথ রায় ১৮৭২ সালে বার্ষিক ৫ হাজার টাকা আয়ের সম্পত্তি দান করেন। ১৮৭৩ সালে এফএ ক্লাস যুক্ত হয়ে স্কুলটি সেকেন্ড গ্রেড কলেজের মর্যাদা লাভ করে এবং নাম হয় বোয়ালিয়া হাই স্কুল। ১৮৭৪ সালে পুঠিয়ার রাণী শরৎ সুন্দরী দেবীর আর্থিক সাহায্যে কলেজের জন্য একটি পাকা ভবন নির্মাণ হয়েছিল।৬৬৩ ১৮৭৮ সালে রাজশাহী কলেজ অ্যাফেলিয়েশন পেলে এফএ ক্লাস কলেজ অংশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায় এবং স্কুলের নাম হয় কলেজিয়েট স্কুল। ১৮৮৪ সালে রাজশাহী কলেজ নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হলেও স্কুল ও কলেজ একই ম্যানেজমেন্টে পরিচালিত হতো। ১৯২৩-১৯২৪ সালে চিন্তাহরণ চক্রবর্তী প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন স্কুল ও কলেজের নিয়ন্ত্রণ পৃথক হয়ে যায়।২
১৯০৮ সাল পর্যন্ত স্কুলের কোনো ম্যানেজমেন্ট কমিটি ছিল না।Visiting Committee বা পরিদর্শন কমিটি নামে একটি কমিটি ছিল। এ কমিটি মাঝে মাঝে স্কুলের উন্নয়নের জন্য সাহায্য করতো।৬৬১ ১৯৩০ সালে এ স্কুলে বালক সেনা সংগঠন, জুনিয়র রেডক্রস সোসাইটি তৈরি হয় এবং সর্ব প্রথম বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। ১৯৪০-১৯৪১ সালে পাঠাগার ব্যবস্থা চালু হয়। বর্তমানে এ পাঠাগারটি পশ্চিম পাশের ভবনের দোতলার একটি বড় কক্ষে শোচনীয়ভাবে অবস্থান করছে। যাকে পাঠাগার ভাবাই কষ্টসাধ্য। ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম পাইলট স্কুল হিসেবে স্কুলটি গৃহীত হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে প্রভাতী ও দিবাশাখা শিফট চালু হয়। পাকিস্তান আমলে ১১ কক্ষ বিশিষ্ট একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ হয়েছিল।২
বাবু মোহনী মোহন চক্রবর্তী প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ১৮৫৭ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল ১৪৬ জন। ১৮৫৭ সালে ছাত্র সংখ্যা ছিল ২০০ থেকে ২১৫ জনে বৃদ্ধি পায়। এ সময় ছাত্র বেতন ১ টাকা থেকে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরও স্বীকৃতি লাভ করেছিল।৭৪ ১৯৬২ সালে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি দোতলা বিজ্ঞান ভবন ও একটি ওয়ার্কশপ নির্মিত হয়। ১৯৬৩ সালে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ফলে কলেজ ও বিদ্যালয় সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে পড়ে। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে আর একটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ হয়।৭৪ ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কলেজিয়েট স্কুল রাজশাহী শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৬৯ সালে পুনরায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পরিদপ্তর, রাজশাহীর উপ পরিচালকের নিয়ন্ত্রণে আসে।
১৯৬৪ সালে প্রভাতী ও দিবাশাখা শিফট চালু হয়।২ উন্নত শিক্ষামানের ফলে অভিভাবকগণের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৯৬৪ সালে বিদ্যালয়ে প্রভাতী শাখার (Morning shift) সংযোজন করে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ পৃথক শিক্ষকমণ্ডলী নিযুক্ত করা হয় এবং বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য ও শিল্পকলায় পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। ২০০৮ সালে স্কুলটিকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ আছে। ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখের প্রাপ্ত তথ্যানুসারে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র সংখ্যা ১৫৫০ জন। স্কুলটির মোট শিক্ষক সংখ্যা ৫৭ জন।৩০৪
২০০০ সালে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে এ স্কুলে ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত দুই হাজার ছাত্র অধ্যয়ন করে। শিক্ষকের সংখ্যা ৫৫ জন। এর মধ্যে ১ জন প্রধান শিক্ষক, ২ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক, ৫২ জন সহকারী শিক্ষক। স্কুলের জমির পরিমাণ .৯৭২৫ একর। এরমধ্যে কিছু জমি সরকারি আদেশে রাস্তার জন্য ছেড়ে দিতে হয়। স্কুলের জমি প্রাপ্তির কোনো রেকর্ড পাওয়া যায় না।
৩১ জুলাই ২০০৫ তারিখে এখানে আরেকটি নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। মেয়র ও সংসদ সদস্য মো. মিজানুর রহমান মিনু ভবনটি উদ্বোধন করেন। একই দিনে মেয়র দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসার নুতন ভবন উদ্বোধন করেন। রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ভবন দুটি নির্মিত হয়। এতে ব্যয় হয় ৪০ লক্ষ টাকা।১৮১
প্রতি বছর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মধ্যে এবং এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান অধিকারী সকল ছাত্র অথবা সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তকে আব্দুল মতিন মেধা বৃত্তি প্রদান করা হয়। এ প্রশংসনীয় কর্মের উদ্যোক্তা এ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মরহুম এএইচএম আব্দুল মতিন। তিনি ১৯৮৬ সালে এ স্কুলের দেড়শত বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আব্দুল মতিন মেধা বৃত্তি চালু করার উদ্দেশ্যে ৫৪ হাজার টাকা ও পরে ২৮ হাজার টাকা মোট ৮২ হাজার টাকা প্রদান করেন। এএইচএম আব্দুল মতিন ১৯৩৮ সালে এ স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৪৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ব্রিটিশ কোম্পানি, জাপানী কোম্পানি, পাকিস্তান আমলে হাবিব ব্যাংকের উপদেষ্টা এবং দেশ স্বাধীনের পর রূপালী ব্যাংকের পরিচালক ও ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে চাকরি করেন। পরবর্তীতে ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানিরও চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি পরলোক গমন করেন।
এ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র আবদুল্লাহ আজফার তাঁর মায়ের নামে ২০০৮ সালে আসফিয়া আজফার বৃত্তি চালু করেন। গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের এ বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র মো. মিজানুর রহমান মিনু তাঁর আব্বার নামানুসারে ২০১০ সালে ফজলার রহমান মেমোরিয়াল মেধা বৃত্তি চালু করেন। বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্রটি এ বৃত্তি পাওয়ার গৌরব অর্জন করে। এসএসসি-১৯৯৯ ব্যাচের ছাত্ররা প্রতি বছর গরিব শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণে এগিয়ে আসেন। এ স্কুলের পুরাতন ছাত্রদের সংগঠন ‘সতীর্থ ৭৪’ স্কুলটির বিভিন্ন ধরণের উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা করেন।৬৬৯